 |
মরহুম হবিবুর রহমান মাষ্টার |
গভীর অরন্যে শিক্ষার মহান ব্রত নিয়ে যিনি প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন তিনি হলেন
জাথালিয়া গ্রামের প্রাণপুরুষ মরহুম হবিবুর রহমান মাষ্টার। এলাকা কিংবা
এলাকার বাইরের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে ‘ঠান্ডু মাস্টার’ নামে অশেষ
শ্রদ্ধার সাথে আজো স্মরণ করেন। বর্ণাঢ্যময় জীবনের অধিকারী ক্ষনজন্মা এ
মানুষটির পিতার নাম আব্দুল আজিজ সরকার, মাতার নাম বেলাতননেছা শৈশবেই
মা-বাবা দুজনকেই হারান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
১৯৭০ সালে মহেরা আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। করোটিয়া
শাহাদাত কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭৪ সালে বি,এ পাশ করেন। দীর্ঘ
সময় শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িয়ে ছিলেন ফুলবাড়ীয়া আক্কেল আলী শিকদার উচ্চ
বিদ্যালয়ে। কুসংস্কার ও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এ অঞ্চলে সভ্যতার ফুল
হয়ে যিনি প্রথম শিক্ষার বীজ বপন করেছিলেন। নিজের হাতেই শিক্ষার মহান
আদর্শকে পৌছে দিয়েছিলেন সাধারন মানুষের দোরগোড়ায়। শিক্ষার আদর্শ ও
উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ণ করার লক্ষে তিনি স্ব-উদ্যোগে একটা যুব সংগঠন গড়ে
তোলেন। সেই আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশকে যে কজন ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষায়
আসীন হয়েছিল তাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছিল তাঁর অবদান। বলতে গেলে
নিরক্ষরতার অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া জাথালিয়া গ্রামে প্রথম তাঁরঐকান্তিক
প্রচেষ্টায় শিক্ষার আলোর ছোঁয়া লাগে। তিনি সহস্র প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে
বাইসাইকেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
অবহেলিত এ জনপদের মানুষের কল্যাণের জন্য যিনি আজীবন নিমগ্ন ছিলেন। আজ তিনি
আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর আদর্শ। যে আদর্শের পথ ধরে হেঁটে
চলেছি আমরা। মুত্যু শাশ্বত, ধ্রুব সত্য। তবু কিছু মৃত্যু আছে যা সহজেই মেনে
নেয়া যায় না। হয়তো সেদিন তাঁর অকাল মৃত্যুকে কেউ মন থেকে মেনে নিতে
পারেনি। তাইতো দেখেছি, সেদিন তাঁর মৃত্যুতে সারা এলাকার মানুষকে শোকে ম্লান
হতে। ১৯৯৪ সালের ১৬ নভেম্বর তাঁর অকাল মৃত্যূতে প্রগতিশীল শিক্ষার
আন্দোলনকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়ে যেতে পারেননি সত্য, তবু জাথালিয়া
তথা ফুলবাড়ীয়ার শিক্ষা, সংস্কৃতির ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা
থাকবে অনাদিকালধরে।
কোন মন্তব্য নেই