আমি চির কৃতজ্ঞ, আমি চিরঋণী, আজ যা লিখি, ঠিক যতটুকু লিখি, কর্ণে বাজে তোমার কন্ঠধ্বনি,
শ্রদ্ধেয় জিয়াউল হক স্যার ।আমাদের জাথালিয়া মজিদচালা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক । আমার শ্রদ্ধাভাজন স্যার । জন্মগ্রহন করেন ১লা এপ্রিল ১৯৬৭ সনে, টেকিবাড়ী, চাঁনপুর কালিয়াকৈর ,গাজীপুরে । পিতা-মো: আফসান উদ্দিন । মাতা সবুরজান বেগম ।স্যার তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্ত মির্জাপুর কলেজ থেকে বি,এ ও বি,এড ডিগ্রি অর্জন করেন ।
আমরা সকল ছাত্র/ছাত্রী স্যারকে জিয়ারত স্যার বলেই অশেষ শ্রদ্ধার সাথে সম্মোধন করতাম ।বাংলা বিষয়ে পড়াতেন স্যার, তাইতো গদ্যে পদ্যে মিলিয়ে একটু রসিকই ছিলেন বটে । তিনি যে শুধু আমাদের একজন ভাল শিক্ষক ছিলেন এমনটা নয়, একজন ভাল বন্ধুও ছিলেন নি:সন্দেহে । আমরা সকল শিক্ষার্থীরা স্যারের সাথে বন্ধুর মত মিশে আমাদের সুখ দু:খ , হাসি কান্না সহ সকল বিষয় প্রাণ খুলে শেয়ার করতে পারতাম ।সে অনুমতি স্যার আমাদের দিতেন অত্যন্ত খুশি মনেই । কিন্তু তাই বলে স্যারের প্র্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ কিংবা আমাদের প্রতি স্যারের কঠোর অনুশাসনের বিন্দুমাত্র ঘাটতি হয়নি ।বন্দু লিটনদের বাড়ীতে ধীর্ঘদিন থাকার সুবাদে স্যারের সাথে অসংখ্য দিন অসংখ্য রাত এক সাথেই থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল ।স্যার বরাবরই একটা বিশাল হৃদয়ের মানুষ । এমনিতেই তিনি অনেক ভালবাসতেন আমায় ।
বাংলা বিষয়ে অপরিসীম দক্ষতা ছিল স্যারের ।স্যারের ক্লাসে গেলে কখনোই মনে হেতো না আমরা কঠিন কোন ক্লাশে এসেছি ।মনে হত আমরা আনন্দময় শিক্ষা গ্রহন করছি ।আজ হঠাৎ করেই স্যারের সাথে ঘটে যাওয়া স্কুল জীবনের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল …দিন তারিখ ঠিক মনে নেই কিন্তু তখন আমি ক্লাশ এইটে পড়ি, আমার ক্লাশমেট বন্দু সাহেদ দুলাল হঠাৎ করেই ক্লাশের ভেতর প্রচন্ড চোখের যন্ত্রনায় ছটফট করছিল । আমরা সকল শিক্ষক- শিক্ষার্থী মিলে তাকে ক্লাশ থেকে স্কুল মাঠে বের করে এনে যখন তার সেবা শ্মশ্রুায় ব্যস্ত ঠিক সেই মুহুর্তে স্যার খুব দৌড়ে এসে অস্থির, রেগেমেগে বলে ফেললেন..
ও পড়ালেখা বাদ দিয়ে সারাদিন শুধু মনির খানের গান গায়….বিধি আমার এ চোখ অন্ধ করে দাও ?
তবে চোখে তো সমস্যা হবেই। এখন কান্না কেন? সামলাও ঠেলা?
স্যারের এমন কথা শুনে উপস্থিত সকল ছাত্র/ছাত্রী শিক্ষক মন্ডলী তো হেসে অস্থির প্রায় । এমনকি চোখে প্রচন্ড ব্যাথা থাকা সত্তেও বন্দু দুলালও সেদিন না হেসে থাকতে পারেননি ।ছাত্রের প্রতি কতটা ভালবাসা, স্নেহ মমতা থাকলে এমন পরিস্থিতির মখোমুখী নিজেকে সামলে নিতে পারেন ।প্রচন্ড নীরবতার মাঝেও স্যার সেদিন আমাদের মনে আনন্দ এনে দিয়েছিলেন । স্যারের এরকম হাজারো হাস্য রসাত্বক কথাবার্তা আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে অনন্দ এনে দিত প্রতিনিয়ত।
স্যারের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ ও চিরঋণী। কারন আজকে বাংলা বিষয়ে আমার যতটুকু অগ্রগতি তিনি তার ভিত্তিটাই গড়ে দিয়েছিলেন স্বমহিমায় ।প্রানভারে স্যারের জন্য শুভ কামনা রইল । মহান আল্লাহ তাআলা যেন তাকে সুস্থ রাখেন আজীবন ।
কোন মন্তব্য নেই